সামাজিক যোগাযোগের সাইট: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের সামাজিক যোগাযোগকে দ্রুত, আকর্ষণীয়, এবং কার্যকরী করে তুলেছে। শুধু তাই নয়, এর বাইরেও নানানভাবে আমাদের সামাজিক ব্যাপারগুলো ইন্টারনেটে উঠে এসেছে। আগের পাঠে বলা হয়েছে তোমার বন্ধুকে কোনো কিছু জানাতে হলে খুদেবার্তা বা ই-মেইল পাঠানোর কাজটি কিন্তু তোমাকে করতে হবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, তুমি যা কিছু করছো তাই তোমার বন্ধুরা জেনে যাচ্ছে, আলাদা করে তোমার কিছুই করতে হচ্ছে না তাহলে কেমন হয়? নিশ্চয়ই খুবই ভালো হয়। এই চিন্তা থেকে এখন ইন্টারনেটে গড়ে উঠেছে বেশকিছু সামাজিক যোগাযোগের সম্পূর্ণ সাইট। নিজের ভালোলাগা মন্দলাগা, অনুষ্ঠানাদি, চাকরিতে প্রমোশন, সন্তানাদির বিয়ে ইত্যাদি নানা বিষয়ের তথ্য, ছবি কিংবা ভিডিও বিনিময় করা যায় এগুলোর যে কোনো একটি থেকে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক এরকম ওয়েবসাইট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ফেসবুক (www.facebook.com), লিংকডইন (linkedin.com), এক্স (www.x.com), খুবই জনপ্রিয়। পৃথিবীর প্রায় সকল ভাষাভাষী লোক এই সাইটগুলো ব্যবহার করে।
পৃথিবীর কোটিকোটি লোক ফেসবুক ব্যবহার করে
এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক। পৃথিবীর কোটি কোটি লোক এখন ফেসবুক ব্যবহারকারী। বাংলাদেশেও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ফেসবুক বা অনুরূপ সাইটগুলোতে প্রত্যেক ব্যবহারকারী তার পরিচিতিমূলক একটি বিশেষায়িত ওয়েবপেইজ চালু করতে পারেন। এটিকে বলা হয় ব্যবহারকারীর প্রোফাইল। ব্যবহারকারী তার নিজের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য, তার ভালোলাগা, ভালো না লাগা ইত্যাদি বিষয়গুলো তার প্রোফাইলে প্রকাশ করে। এরপর একজন তার প্রোফাইল থেকে ফেসবুকে তার বন্ধু'দের খুঁজে বের করে। এখানে বন্ধু বলতে আমরা প্রচলিতভাবে যেটা বোঝাই সেটা বোঝানো হচ্ছে না, ফেসবুক অনুযায়ী একজন মানুষের সঙ্গে অন্য যত মানুষের যোগাযোগ থাকবে তারা সবাই হচ্ছে 'তার 'বন্ধু'। যদি তোমার বন্ধুটিরও ফেসবুকে প্রোফাইল থাকে তাহলে তুমি তাকে খুঁজে নিয়ে বন্ধু হওয়ার জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারো। যদি সে সম্মতি দেয় তাহলে তোমরা বন্ধু হয়ে যাবে। একইভাবে অন্য কেউ যদি তোমাকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ করে আর তা তুমি গ্রহণ করো তাহলে তুমিও তার বন্ধু হবে। তুমি আর তোমার বন্ধুরা মিলে হবে তোমার 'নেটওয়ার্ক' বা তোমার 'সামাজিক নেটওয়ার্ক' বা সোশাল নেটওয়ার্ক (Social Network)।
এক্স-এ ছোট ছোট পোস্ট দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া যায়
এখন তোমার নেটওয়ার্ক আস্তে আস্তে বড় হতে থাকবে। তোমার প্রাইমারি স্কুলের যে বন্ধুটির সাথে তোমার দীর্ঘদিন দেখা হয় না, যে কিনা এখন হয়তো অস্ট্রেলিয়াতে থাকে, তাকেও তুমি এখানে খুঁজে পেতে পারো। তুমি যখনই তোমার প্রোফাইলে কোনো তথ্য প্রকাশ করবে সঙ্গে সঙ্গে তা তোমার বন্ধুদের পেজের একটি বিশেষ জায়গায় ভেসে উঠবে। তুমি তোমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে যা ফেসবুকে 'স্ট্যাটাস' নামে পরিচিত। এক্স-এ এটাকে বলা হয় পোস্ট। তুমি যদি কোনো ছবি প্রকাশ করো, যদি কোনো ভিডিও সবাইকে দেখাতে চাও তাহলে তা তোমার প্রোফাইলে প্রকাশ করলেই তা তোমার নেটওয়ার্কের সবাই দেখতে পাবে। শুধু তাই নয়, তোমার বন্ধুদের সবাইকে ফেসবুক মনে করিয়ে দেবে তোমার জন্মদিন কবে! সবাই তখন তোমাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারবে। কেবল তোমার ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ নয়। এখন এই সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন, কাজের খবর এমনকি সামাজিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজও হচ্ছে।
২০১০-২০১১ সালে তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়ার গণঅভ্যুত্থানে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ সাইটের বিশেষ ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সোশাল মিডিয়া যেমন: ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
common.read_more